শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
The Daily Post
তাঁরক গোঁসাইয়ের ১০৮তম তিরোধান দিবস

নড়াইলের জয়পুর কবিধাম সেজেছে অপরূপ সাজে 

নড়াইল প্রতিনিধি

নড়াইলের জয়পুর কবিধাম সেজেছে অপরূপ সাজে 

বাংলা কবিগানের অন্যতম পথিকৃৎ কবিয়াল তাঁরক গোসাইয়ের ১০৮তম তিরোধান দিবস আজ শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি)। এ উপলক্ষে লোহাগড়ার কবিধাম জয়পুর গ্রামে দু’দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গতকাল শনিবার  শুভ অধিবাস ও রোববার  মহোৎসব। 

তিরোধান দিবসকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকার ভক্ত অনুরাগী কবিধাম জয়পুর গ্রামে আসতে শুরু করেছেন।  গোঁসাইবাড়ি সেজেছে অপরুপ সাজে। এ উপলক্ষে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুুর গ্রামের ‘গোঁসাইবাড়ি’ একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী তীর্থক্ষেত্র। গোঁসাইবাড়ি দেশের মতুয়া সমপ্রদায়ের কাছে অতি পরিচিত ও পূজনীয় নাম। 

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ। ছোট, শান্ত ও শীর্ণকায় বহমান নবগঙ্গা নদীর উত্তর-পশ্চিম পাড়ে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গোঁসাইবাড়ি।

লৌকিক সংস্কৃতির লীলাভূমি এই গোঁসাইবাড়ি। আর এই জয়পুর গ্রামে বাংলা ১৯৫২ সালের ১৫ অগ্রহায়ণ অমাবস্যা তীথিতে জন্মগ্রহণ করেন মতুয়া ধর্মের অন্যতম ধর্মগুরু যোগসিদ্ধ মহাপুরুষ তারক চন্দ্র সরকার। ভক্তকুলে তিনি ‘তারক গোঁসাই’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।

তার পিতার নাম কাশীনাথ সরকার ও মাতার নাম অন্নপূর্ণা সরকার। কাশিনাথ ছিলেন একজন পেশাদার শিল্পী। কবিগান গেয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। এজন্য তিনি কবিগানের একটি দল গড়ে ছিলেন। এ গান গেয়ে তিনি বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন।

কিন্তু কাশীনাথ ও অন্নপূর্ণার ঘরে কোন সন্তান ছিল না। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। দীর্ঘদিন ধরে কোন সন্তান-সন্ততি না থাকায় কাশীনাথ ‘পুত্রেষ্টী’ যজ্ঞ করেন এবং পরবর্তীতে অন্নপূর্ণার গর্ভে তারক গোসাই জন্মগ্রহণ করেন।

কাশীনাথের বাড়ির সামগ্রীক পরিবেশ পরিস্থিতি ও অন্য কবিয়ালদের আগ্রহে ছোট বেলা থেকেই তারক গোঁসাই সংগীতের সাথে জড়িয়ে পড়েন। আশে পাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তার গানের সুনাম। তিনি বহু কবিগান ও কবিতা রচনা করেছিলেন। এতদাঞ্চলের নিম্নবর্ণের মানুষের কাছে তিনি ‘দেবদূত’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।

পিতা কাশীনাথ মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরেন তাঁরক গোঁসাই। পুরোপুরি লেগে পড়েন কবিগানের দল নিয়ে। নিজেই দল গড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে কবিগান গাইতে শুরু করেন। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে কবিয়াল তারক গোঁসাইয়ের নাম ও খ্যাতি।

তিনি শুধু কবিগানই গাইতেন না, তিনি অজস্র কবিগান রচনা করেছিলেন। নিজের লেখা কবিগানগুলো সুর দিয়ে ছন্দের তালে হূদয়গ্রাহী করে তোলেন। অপূর্ব সুরের জাদুকরী কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন তারক গোঁসাই। কবিগানের অন্যতম দিকপাল তারক গোঁসাই রচিত কবিতা ও কবিগানের সংখ্যা দু’সহস্রাধিক। বাংলা ১৩২১ সালের ১৭ ফাল্গুন শিব চতুদর্শীর রাতে তাঁরক গোসাই ইহলোক ত্যাগ করেন।

জয়পুর মহাশশ্মানের সাধারণ সম্পাদক কানু দাস বলেন, এ বছর মহাসাধক তাঁরক গোঁসাইয়ের তিরোধান দিবসে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দের আগমন ঘটবে। তাদের সেবায় পরশমণি মহাশশ্মানের স্বেচ্ছাসেবকরা ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা মন্দির পরিচালনা পর্ষদের প্রচার সম্পাদক কাজল পাল বলেন, আগত ভক্ত অনুরাগীদের সেবাদানের জন্য মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে সকল প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে তারক ধামের অন্যতম কর্ণধার পরীক্ষিত শিকদার বলেন, ‘তারক গোঁসাইয়ের জন্ম ও মৃত্যুতিথীর অনুষ্ঠান রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের দাবি জানান।

টিএইচ